ও পাড়েতে সর্ব সুখ
লিখেছেন লিখেছেন মামুন ০৫ অক্টোবর, ২০১৪, ০১:৫৬:০৭ দুপুর
ছোটবেলায় আব্বার কাছে... স্কুল জীবনে ক্ষীতিস চন্দ্র বাবুর আদরে-ভালোবাসায় আর স্কুলের বাংলার মফিজ স্যারের বেতের 'মাইরে'ও আমি মনে হয়, বাংলা ভাষা ভালোভাবে রপ্ত করতে পারি নাই।
আমাকে এখনো প্রতি সপ্তাহে শুদ্ধ বাংলায় কথা বলা শিখতে হয়।
আমার ছোটকন্যা 'জ্ঞানী বাবু'র কাছে।
'তুমি এই গুলি কি বলো পাপা ? খাইছি, করছি, দেখছি। তুমি বলবে খেয়েছি, করেছি, দেখেছি - এইভাবে কথা বলতে হয়, বুঝেছ?'। আমার মুখ দিয়ে বের হয়ে আসতে চায় 'বুঝছি'। কিন্তু আমাকে বলতে হয়,
'বুঝেছি পাপা।'
হৃদয়ে কেমন এক 'নাই নাই' অনুভূতিতে নিঃস্ব হয়ে উঠি । আমার আব্বা, ক্ষীতিস স্যার কিংবা মফিজ স্যার আমাকে ঠিকমত ভাষা শিখাতে পারেন নাই। অদূরে বসা আমার অর্ধাঙ্গিনী তার মেয়ের এই দুরন্ত শিক্ষকপনায় যারপর নাই আনন্দিত ও গর্বিত। সেটা ওর চোখের ঝিলিকে প্রকাশ পায়।
একজন মায়ের চোখের ঝিলিক!
আপনারা এখনো কেউ দেখে না থাকলে দেখে নিয়েন যাদের মা আছেন।
আমার ছোট মেয়ে এবং আমার ব্লাড গ্রুপ একই। 'ও পজিটিভ'। এটার জন্য আবার বড় মেয়ের মন খারাপ। তারটা ও কেনো 'ও পজিটিভ' হল না।
এক মায়ের আনন্দের কথা বলছিলাম। আমার দুই মেয়ে ভালো ছবি আঁকে। জাহাঙ্গীরনগর ভার্সিটির বিভিন্ন অকেশনে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগীতায় এরা সবসময়ই ভালো করে- প্রথম হয়। তা নিয়ে ওদের মা নিজেকে খুব গর্বিত মনে করেন। তখন আমার কন্যারা তার কাছে "আমার মেয়ে" হয়ে যায়।অথচ ওদের প্রতিটি ছবির পিছনে এই যে অদৃশ্য আমি, যে কিনা ছবির মূল থীম / প্লট বলে দেই, তার কোনো জিকির নেই। কারণ ওদের মা নিজেও খুব ভালো ছবি আঁকা শিখান। এ জন্য তিনি-ই সবকিছু।
আবার প্রতি সপ্তাহে বাসায় গেলে এই মেয়েদের বিরুদ্ধে মায়ের এবং মায়ের বিরুদ্ধে মেয়েদের কিছু অভিযোগ আমাকে শুনতে হয়।মেয়েদের অভিযোগের কথা আর একদিন। কারণ আমার লেখা বড় হয়ে যাচ্ছে।
ছোট মেয়ে এমন কিছু একটা করল যেটা তার মায়ের পছন্দ নয়, অমনি তার মা বলবে-
'ও প্লাস তো'। তার মানে আমার ব্লাডের দোষ। অর্থাৎ খারাপটা সব আমার।
বড় মেয়ে তার গ্রুপে নাচে ফার্স্ট হলো। তখন আর আমার কোনো ক্রেডিট নাই। সরাসরি বউয়ের মেয়ে হয়ে যাবে সে। কিন্তু পড়া রেখে টিভি'র সিরিয়ালে সময় দেয়- তখন সে আমার মেয়ে। আচ্ছা, এটাও কি আমি বলে দিয়েছি?
এ ভাবে শুধু বাসায় নয়, আমার কর্মক্ষেত্রেও এরকম অবস্থা।
অফিসে নতুন জয়েন করেছি। আগের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু 'ইমপ্লিমেন্ট' করার চেষ্টা করি। কাজও হয়। নিজেই বুঝি - বুঝতে পারা যায়। কিন্তু কেউ বলবে না... মুল্যায়ন করবে না।
কমপ্লায়েন্স অডিট হবে। সমস্ত কিছু দেখেশুনে একটা ফাইনাল চেক করে জিএম স্যারের কাছে রিপোর্ট। তিনিও দেখেশুনে ' ওকে, ফাইন' বলে রেখে দেন। অডিটের সময় হঠাত Emergency Exit Way'র লাইট ফিউজ হয়ে গেলো (ভাগ্য খারাপ?)। সব দোষ আমার। ঠিকমত ফলোআপ কেন করা হলো না, এজন্য শোকজ।
স্টোরে ম্যানেজার নেই। আমাকে আমার কাজের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হলো। ভাঙ্গাচুরা এক স্টোরকে আপটুডেট করলাম। সফটওয়্যার এলো ম্যানুয়াল রেজিস্টার এর যায়গায়।আরো ইমপ্লিমেন্ট করলাম। অথচ মালিকের সামনে সমস্ত ক্রেডিট চলে গেলো আমার বসের খাতায়। আমি কিছু-ই করি নাই।
তাই ভাবি, ভালোটা সবসময় অন্যদের এবং খারাপটা সবসময়-ই আমার। ও পাড়েতেই সর্ব সুখ...
বিষয়: বিবিধ
৮২৯ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাজাকাল্লাহু খাইর।
একটু নিজেদের দিকেই টানলেন মনে হচ্ছে না?
মানলাম "সন্তানেরা ভাল করলে সেটা মায়েদেরই ক্রেডিট" - কিন্তু খারাপ করলে সেটা সবসময় বাবাদের 'ডিসক্রেডিট' হবে কেন?
সুন্দর অনুভূতি রেখে যাবার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
এমন অনুভবের উপলব্ধিতার মুখোমুখী এখনো হয়নি আমার,হয়তো হবেও না। কল্পনায় দৃষ্টি বুলিয়ে কি সব হয়.....!
রাজকন্যাদের জন্যে অনেক অনেক শুভ কামনা। পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষদের অন্তর্ভুক্ত হোক আল্লাহ তায়ালার কাছে এই দোয়া জানাই।
রাজরানী সহ আপনিও অনেক ভালো থাকবেন....
আপনি কিভাবে বলতে পারেন যে হবে না? ইনশাআল্লাহ সময়েই সব ঠিক হয়ে যাবে। আপনার দোয়ায় আমীন। শুভেচ্ছা রইলো।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
তবুও ভালো লাগলো
শুনে খুব ভালো লাগলো যে, বাবাদেরকে ক্রেডিট দেয়া হচ্ছে।
সুন্দর অনুভূতি রেখে গেলেন, সেজন্য অনেক ধন্যবাদ।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
খুব সুন্দর বলেছেন। এভাবে তো কখনো ভেবে দেখি নাই!ইনশা আল্লাহ, এখন থেকে আর ব্যক্তি, পরিবার কিংবা সমাজের কাছে কোন বিনিময় প্রত্যাশা করব না।
আপনি সঠিক পথেই রয়েছেন।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
সম্ভবতঃ আপনার বয়সের আশেপাশে/উপরে আছি-
এসব অভিজ্ঞতার ঝুলিটা প্রায় একই রকম আইটেমে ভরা!
আপনার তো না হলেও চলবে-
উনাদের জন্য ঈদের শুভেচ্ছা-
কুরবানী ও ঈদ মোবারক
আপনার অভিজ্ঞতার ঝুলির খবর জেনে আশ্বস্ত হলাম।
আপনার শুভেচ্ছা 'ঊনাদের'কে জানিয়ে দিলাম।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন